আরফিন শরিয়ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়::
দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নে জেলেদের মধ্যে ভিজিএফের চাল বিতরণ শুরু হয়। বিতরণ করতে গিয়ে প্রতিটি জেলেকে ৮০ কেজি চালের পরিবর্তে মাত্র ৩০ কেজি করে দেওয়া হচ্ছিল। চুরির কাজটি করছিলেন স্বয়ং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন পল্টু (ইত্তেফাক-৫ এপ্রিল)। গত দুই সপ্তাহ ধরে এ ধরনের সংবাদ অনেক বেশি পরিমাণে পাচ্ছি আমরা। অথচ দেশের এ দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে এ ধরনের কোনো সংবাদ আমাদের কাম্য নয়।
বর্তমানে নোভেল করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে আরম্ভ করেছে। ছড়ানোর এই সময় যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ন্যুব্জ হয়ে পড়বে। দরিদ্র, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী খেতে পারবে না। তারা নির্ভর হয়ে পড়বে সরকারি সহায়তা, বেসরকারি উদ্যোগে সাধারণ জনগণ ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সহায়তার ওপর। ইতিমধ্যে এমন বেশ কিছু কার্যক্রমও দেখা যাচ্ছে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সাধারণ জনগণ ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সহায়তায় অনেক মানুষের খাবারের বন্দোবস্ত হচ্ছে। বেসরকারি উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে খুবই কম। এখানে ব্যক্তি স্রষ্টার নিকট থেকে ধর্মীয় পুণ্য আদায়, কেউবা সমাজের যশ-খ্যাতি লাভ, কেউবা মানবিকতার দায়বদ্ধতা থেকে এসব উদ্যোগ নিয়ে থাকেন। প্রতিষ্ঠানভেদেও কেউ প্রাতিষ্ঠানিক দায়বদ্ধতা কিংবা কিছু প্রতিষ্ঠান তৈরি হয় মানবিকতার সুবাদে। কিন্তু সবচেয়ে বড়ো আশঙ্কার জায়গা হচ্ছে সরকারি খাত। রাষ্ট্র নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পূরণ করার প্রয়োজনে নানা কর্মসূচি হাতে নেয়। সরকারি খাতের এমন উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করা হয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে। আর দেশের এই ক্রান্তিকালে জনপ্রতিনিধিরা মহান দায়িত্ব নিতে শুরু করেছেন। তারা ভিজিএফ, ওএমএস কর্মসূচির চাল আত্মসাতের মধ্যে কাজ করছে। এই আত্মসাত্কারীদের তালিকা একেবারে ছোটো নয়, এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ জনেরও অধিক সংখ্যক চাল আত্মসাত্কারী জনপ্রতিনিধি পাওয়া গেছে বলে লোকমুখে প্রচলিত। সরকার এদের তিন জনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিও দিয়েছেন। এখানে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে জড়িত থাকে বাজারের একাধিক সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেট সুযোগ বুঝে এসব জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে আত্মসাত্কৃত চাল কিনে নেবে। পরে প্রয়োজনমাফিক দাম বাড়ানো শুরু করবে।
সরকার প্রথম থেকেই বলে আসছিল দেশে যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য মজুত রয়েছে। কেউ মজুত করবেন না, কিন্তু আমরা কি দেখলাম? জনপ্রতিনিধিরাই খাদ্য আত্মসাত্ করা শুরু করেছে, আর সিন্ডিকেটরা করছে মজুত। এরা আত্মসাত্ এবং মজুত একসঙ্গে করা শুরু করেছে। গরিব, না খেতে পারা, যাদের আয়ের কোনো উত্স নেই, দিন আনে দিন খায় এমন লোকদের খাবার আত্মসাত্ তারা করছে।
এরই মাঝে বাধ্য হয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় ওএমএস চালের কর্মসূচি স্থগিত করেছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এর কারণ হিসেবে বলা হয়, যাদের ওএমএসের চাল নেওয়ার প্রয়োজন নেই তারাও এসব চাল সংগ্রহ করছেন। ফলে দরিদ্র, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি অন্যরাও এখান থেকে সুযোগ নেওয়া শুরু করেছেন। এছাড়া অনেকে ওএমএসের চালও মজুত করা শুরু করেছেন। ক্রমান্বয়ে ঘটতে থাকা দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে এমনটাই করতে হয়েছে মন্ত্রণালয়কে।
এসব জনপ্রতিনিধি, সিন্ডিকেটকে রুখতে হবে এখনই। না হলে করোনার সংকটের চেয়ে বড়ো সংকট হয়ে উঠবে খাদ্য সংকট। আর সংকট তৈরিতে সহায়তা করবে সারাদেশে ওত পেতে থাকা সিন্ডিকেট ও রাক্ষস জনপ্রতিনিধিরা। সংকট যা হওয়ার কথা হবে তার চেয়েও বেশি। এর জন্য প্রয়োজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ টিম, মোবাইল কোর্ট দিয়ে শাস্তি নিশ্চিত করা।
লেখক :শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পাঠকের মতামত: